লালমাটিয়া শাহী মসজিদটি ফের যেভাবে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে
- বেলায়েত হুসাইন
- ১২ মার্চ ২০২২, ২১:৩০, আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২, ২২:২৪
১৬৬৫ সালে তৎকালীন বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁ একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই লালমাটিয়া শাহী মসজিদ। লালমাটিয়া বিবির মসজিদ নামেও প্রসিদ্ধ এটি। ধারণা করা হয়, মসজিদের এক পাশে দারা বিবি নামে কথিত এক শাহজাদী বা বেগমের অদৃশ্য সমাধি আছে, সে থেকেই মসজিদটি বিবির মসজিদ পরিচয় লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আহমাদ হাসান দানী রচিত ‘মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে এ তথ্য রয়েছে।
বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় সুবিশাল পুকুর, ঈদগাহ চত্বর ও মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া (লালমাটিয়া মাদরাসা) মিলিয়ে বিবির মসজিদের চারপাশে অন্তত তিন একর জায়গা। চুন-সুরকির মসজিদটির মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অনন্য নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করে অনেককে। মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত এর ভিত্তিপ্রস্তর।
সরু ইটের দেয়ালগুলোর ওপরের অংশ কমপক্ষে পাঁচ হাত পুরু। বৃহদাকার গম্বুজাকৃতির ছাদটি ২৭ বর্গফুট প্রকোষ্ঠের ওপর অষ্টকোণ চৌকির ভিত্তির ওপর স্থাপিত। পার্সিয়ান ক্যালিওগ্রাফি সজ্জিত মেহরাব এবং ছাদের চারপাশে শোভাবর্ধনকারী ছয়টি মিনার।
কালের বিবর্তনে এসবের কিছু কিছু আজ ধ্বংসের পথে। এখন মসজিদের মূল প্রাচীন স্থাপনাকে ঠিক রেখে এর ব্যাপক সংস্কার, পরিবর্ধন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে লালমাটিয়া মাদরাসা নির্মিত হওয়ার পরে মসজিদটি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় জৌলুসপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আজকের প্রাণবন্ত মসজিদটি একসময় তার আসল চেহারা হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশ কায়েম হলে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং তাদের অত্যাচারে লালমাটিয়া জনশূন্য হয়ে পড়ে।
ফলে মসজিদটিও বিরান পড়ে থাকে দীর্ঘদিন এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত মসজিদটি অনাবাদ থাকে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে লালমাটিয়ায় আবার মানুষের আবাস গড়ে উঠলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এটিকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়। আর এ কাজে এগিয়ে আসেন মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ:-এর একনিষ্ঠ ছাত্র মাওলানা আব্দুর রউফ রহ:।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় জঙ্গলাকীর্ণ মসজিদটি পরিষ্কার করে তিনি পুনরায় ইবাদতের উপযুক্ত করে তোলেন। কিছুদিন পর বুজুর্গ এ আলেম মসজিদকে কেন্দ্র করে মক্তব-হিফজ বিভাগ চালুর মাধ্যমে একটি মাদরাসা গড়ে তোলেন, যা আজ গোটা দেশে জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া নামে সুপ্রসিদ্ধ।
বিবির মসজিদের বর্তমান খতিব মাওলানা মাসরুরুল হক নয়া দিগন্তকে জানান, ‘মরহুম বড় হুজুর মাওলানা আব্দুর রউফ রহ: মসজিদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মাদরাসা চালুর মাধ্যমে এলাকায় ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে সোনালি ধারার সূচনা করেছেন, তা আজও অব্যাহত। মাদরাসায় নিয়মতান্ত্রিক পাঠদানের পাশাপাশি আমাদের শাহী মসজিদেও সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনাকে শানিত করতে সাপ্তাহিক তাফসির, দৈনিক কুরআন শিক্ষার আসর এবং সময়োপযোগী আরো নানা আয়োজন করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি লালমাটিয়া মসজিদ-মাদরাসা কমপ্লেক্সকে গণমুখী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করতে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা